আজ সুমনার বিয়ে

Tuhina Parveen(Rakhi)   2018-05-10   Student   WhatsappStory > Bangla-Short-story   1538 Share

আজ সুমনার বিয়ে। পাত্র যে সে বংশের নয়, খুব উচ্চবংশের। শুনেছে ওর হবু বর দেখতে বেশ ভালো। সুমনার বাপ আবার স্কুল মাস্টার, সুমনাকে তাই বারো ভরি সোনা দিয়েছে। এমনিতেই সুমনা বাড়ির বড় মেয়ে, তবে আদরটা একটু বেশি পেয়েছে। লক্ষী মেয়ে, বাড়ির সবার কথা শুনে, সবাইকে খুব ভালো বাসে ও। এতক্ষনে বর এলো। সুমনার মুখটা লজ্জায় লাল, দরজার ফাঁক দিয়ে দেখছে ওর বরকে।অনেক সপ্ন সুমনার, ভাবছে কেমন হবে ওর নতুন সংসার। প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো সুমনার এখন তার নতুন বাড়িতে, নতুন সংসার। এসেই ও ঘরের হাল ধরেছে। খুব সুখি সংসার ওর। খুব ভালো আছে সুমনা। তবে আজ মনটা খুব খারাপ, বাড়ির সবাইকে খুব মনে পরছে, অনেকদিন হয়ে গেছে, সুমনা বাপের বাড়ি যায়নি। কি করেই বা যাবে একা সংসার ওর। বারান্দায় দাড়িয়ে আছে সুমনা, রাস্তা দিয়ে অনেকেই যাচ্ছে, ঐ যে শুভ যাচ্ছে, অনেকটা ওর ভায়ের মতো দেখতে, ওকে দেখলেই সুমনা ওর ভায়ের কথা মনে পরে। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সুমনা, ওর বরের এইসব দেখেই তো মাথা গরম, পুরুষ জাতি তাই রাগটাও একটু বেশি। এ কি চেহেরা, এমন ভয়ংকার রুপ সুমনা আগে কোনোদিন দেখিনি, এ কি শুনছে সুমনা ও নাকি চরিত্রহীনা, লজ্জায় ঘৃনায় আজ সুমনা বাকরুদ্ধ ,অনেকদিন হয়ে গেছে, এখন সব আগের মতো, তবে ও আর বারান্দায় দাড়ায় না, যাতে ওকে সন্দেহ না করে সেই ভয়ে। তবুও ওর বর এখনো ওকে সন্দেহ করে, মুখে বলে না তবে সুমনা বুঝতে পারে আচারনে।আজ সুমনা খুব খুশি, বাপের বাড়ি যাবে যে। সুমনা বাপের বাড়ি এসেই প্রথমে ভাই র খোজ নিল। ভাইকে দেখে খুব খুশি সুমনা কতদিন পরে দেখছে, ভাই ও খুব খুশি দিদিকে দেখে, সুমনার মা ওকে জিজ্ঞাসা করবে কি তার আগেই সুমনা উত্তর দিল, ও খুব ভালো আছে, কিছু বলেনি সুমনা ও খুব চাপা স্বভাবের যে। এখন সুমনা নিজের বাড়িতে, প্রতিদিনের মত আজও খেতে দিয়েছে, কি হল বোঝার আগেই গরম ডালটা ওর মুখে, মুখটা যেনো পুরে গেলো। ওর বর ওকে দোষারপ করছে, এ কি ভাষা বলছে, নিশ্চয় তুই ওই ছেলেটার কথা ভাবছিলি তাই তো ডালে এতো নুন। সেই দিন প্রথম ওর গায়ে হাত দিয়েছিল। এখন এটা রোজকার ঘটনা। সুমনা মা হতে চলেছে, একটা ফুটফুটে মেয়েকে জন্ম দিয়েছে। এখন ওর বর অনেকটা নরম হয়েছে। এক বছর যেতে না যেতেই আবার এক মেয়ের জন্ম দিয়েছে। এবার বর কিন্তু খুব রেগে আছে, ছেলে সন্তান চেয়েছিল যে। দুজনকে নিয়ে কি জালায় পরেছে সুমনা, তাই বড় মেয়েকে বাপের বাড়ি দিয়ে এসেছে। এখন যখনি মার খায় ছোটোমেয়েকে জড়িয়ে ধরে, ওদের জন্যই যে ওর বাঁচা। এইভাবেই চলছে ওর জীবন, বড়ো মেয়ে বাপের বাড়ি ছোটো মেয়ে ওর কাছে। তবে ওর বর এখনো ছেলে চাই। বয়সটা অনেকটা হয়েছে, এই বয়সে মা হবে। হা হয়েছে, তবে লজ্জায় কেউকে বলেনি ও, নিজের মাকেও বলেনি। ওর বর ছেলে চাই বলে লোকে যা বলেছে তাই করেছে, কে জেনো বলেছে মানত কর দেখ ছেলে হবে, ও তাই করেছে। সুমনার আজ খুব পেটে যন্ত্রনা হচ্ছে, প্রসব বেদনায় যেনো মরেই যাই যাই অবস্তা। গাড়িটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে না ও যাবে না, লজ্জায় এই বয়সে মা হয়েছে যে। হা এতক্ষনে শান্তি, ওর বরের ইচ্ছাপূরন হয়েছে ছেলের জন্ম দিয়েছে। এখন সুমনা কিছুটা ভালো আছে, তবে বেশি রক্তক্ষরনের জন্যে শরীরটা খুব দূর্বল। সেদিনের পর থেকেই সুমনার শরীরটা ভালো থাকছে না। প্রায় জ্বর লেগেই থাকে। ছেলের জন্যে বেশি খাটতে হয় না ওর বর সব করে ছেলেকে একটু বেশিই ভালো বাসে যে। তবে দিন দিন সুমনা আরও দূর্বল হয়ে যাচ্ছে, ডাক্তার দেখিয়েছে ডাক্তার একটা পরীক্ষা করতে বলেছে। রিপোর্ট ভালো নয়, ওর দুটো কিডনি 70% নষ্ট হয়ে গেছে। তবে বাপের বাড়ির লোক জানা মাত্রই ভালো ডাক্তার দেখিয়েছে, এখন রোজ ডায়ালাইসিস করতে যাই কোলকাতায়, সপ্তাহে দুদিন যাই। বর সঙ্গে যাই না, বড়ো মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যাই। সুমনা এখন সকালবেলা ট্রেন ধরে মেয়েকে নিয়ে, তারপর কিছুটা হাটা পথ তারপরই হাসপাতালটা খুব কষ্ট করে সুমনা তবুও চুপ সব কষ্ট সহ্য করে। বাঁচতে চাই যে, কত সপ্ন ওর এখনো। সুমনার বর এখন আরও বেশি খারাপ আচরন করে, ছেলেকে ওর কাছে আসতে দেয় না, বলে কাছে যাবি না তোর ও ঐ রোগ হয়ে যাবে। সুমনা আরও ভেঙ্গে পরেছে, এবার সুমনা ঠিক করেছে না আর সহ্যকরবে না। তাই আজ কেউকে কিছু না বলেই ছেলেকে সঙ্গে করে বাড়ি থেকে বার হয়েছে। ভর্তি দুপুর বেলায় হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ডুকছে ওর মা দেখেই জিজ্ঞাসা করলো, কি রে সুমনা কিছু না বলেই চলে এলি, চুপচাপ সুমনা আজ রেগে উত্তর দিল কেনো এসে ভুল করেছি, বলো তাহলে চলে যাই। ওর মা কিছুটা বুঝতে পেরেছে। সুমনা এখানে অনেকটা ভালো আছে। ভাবিরদের বেশ যত্ন করে ওর।তবে রাতে ঘুমোতে পারে না,খুব কষ্ট করে রাতটা কাটে।কাল আবার ওকে কোলকাতা যেতে হবে ডায়ালিসিস করতে।ভোরের বেলা উঠেছে আজ,ব্যাগটা গুছিয়ে নিয়েছে,সবকিছু রেডি।বাথরুম গেলো সুমনা, বাথরুম থেকে ছুটে বার হলো সুমনা খুব ঘামছে আজ, খুব কষ্ট হচ্ছে, নিঃস্বাস নিতে পারছে না। ওঠানে রাখা চেয়ারে এসে বসলো ,আর পারছে না। ওদিকে মা ভাবিরা কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে ।সুমনা এখন হাত পা ছুরছে ,আর কথা বলতে পারছে না। শেষ কথা সুমনার দরজাটা খোলো। দরজাটা খুলে দাও।।।

............... আজ সুমনার বিয়ে By তুহিনা পারভীন (রাখী)