অলসতা হলো দুর্দশার কারণ

Rumman Ansari   2022-09-19   Developer   islam > Laziness is the cause of misery   366 Share

অলসতা হলো দুর্দশার কারণ

নবম হিজরী । প্রচণ্ড তাপদাহ ।

সদ্য সমাপ্ত হলো হুনাইনের যুদ্ধ । হুনাইনের যুদ্ধের পর আল্লাহর রাসূল মালাবার পাঠালেন দূত। বিভিন্ন সাম্রাজ্যে ইসলামের আহ্বান নিয়ে । পাঠালেন রোম সাম্রাজ্যেও। রোমের বাদশাহ কাইসার । দাওয়াত কবুল করলো না । বরং এক লাখ সৈন্য নিয়ে হিমস নামক স্থানে স্বশরীরে হাজির হলো । খবর আসতে লাগলো আল্লাহর রাসূলের কাছে। বিভিন্ন জায়গায় দূতদের করা হয়েছে হত্যা। হত্যা করা হয়েছে প্রতিনিধিদলের সদস্যদেরও । করা হয়েছে বিভিন্ন যায়গায় সৈন্য সমাবেশও ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মোকাবেলা করতে হবে দুশমনদের। পরামর্শ সভা ডাকলেন সাহাবাদের নিয়ে। সিদ্ধান্ত হলো তাবুক অভিযানের । আহ্বান জানানো হলো মুসলিম উম্মাহকে । নাম লেখাতে লাগলেন দলে দলে মুজাহিদগণ। মুনাফিকরা করলো স্বভাব অনুযায়ী বাহানা । আশ্রয় নিলো ছলছাতুরীর । বায়না ধরলো তারা । কয়েক দিন আগে আসলাম হুনাইন থেকে। তীব্র তাপদাহ ও ফসল কাটার মৌসুম আবার যুদ্ধ?

এ যুদ্ধের রসদ সংগ্রহে অংশ নিলেন অনেক সাহাবী । দান করলেন অনেক সাহাবা প্রচুর পরিমাণ সম্পদ। অগ্রগামীদের মধ্যে হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার সকল সম্পদের অর্ধেক । হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উজার করে দিলেন তার সকল সম্পদ । মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন । তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছো? হে আবু বকর! আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্ব-হাস্যে জবাবে বললেন। আমার পরিবারের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথেষ্ট। পিছিয়ে ছিলো না নারীরাও। এগিয়ে এলেন তারা । দান করলেন সাধ্যমত এমনকি ব্যবহারের গহনা নাকের নোলক ও কানের দুল দিয়ে ইতিহাসে স্থান করলেন তারা ।

বেদনাহত হলেন বৃদ্ধা ও শিশুরা । ফিরে গেলেন নিজবাস গৃহে । ভগ্ন-হৃদয় ও মলিন বদনে । জিহাদে শরীক হতে না পেরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রওয়ানা দিলেন তাবুক অভিমুখে। ত্রিশ হাজার সৈন্যের রণযাত্রা । উষ্ট্রারোহী ছিলো খুবই কম । পদাতিক বাহিনীই ছিলো মুখ্য । বেজে ওঠলো যুদ্ধের দামামা । খবর পৌঁছলো রোমের বাদশাহর কাছে । ভয়ে ভীত হয়ে রণভঙ্গ দিলো সে । একদম পিছুটান । মুসলিম বাহিনী কয়েকদিন অপেক্ষা করে চলে এলেন মদিনায় । যুদ্ধ অভিযানে না যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলো অনেকে । কারণে কিংবা অকারণে । সামর্থ্যের পর যাদের না যাওয়া ছিলো ভুল । আল্লাহ সে বিষয়টি সতর্ক করলেন তাঁর প্রিয় হাবিবকে । জবাবদিহি করালেন যুদ্ধে অনুপস্থিতদের। যার মধ্যে প্রায় আশি জন ছিলো মুনাফিক। ইনিয়ে বিনিয়ে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যারা মিথ্যে অযুহাত দিয়েছিলো । ওজর পেশ করেছিলো সত্যের মতো করে । আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবই মেনে নিলেন। বিদায় দিলেন তাদেরকে রেখে দিলেন তিনজন। তারা নেয়নি গোঁজামিলের আশ্রয়। বলেছিলেন প্রকৃত ঘটনা। সত্য কথা। এরা ছিলেন সাচ্চা ঈমানদার, ত্যাগী ও আন্তরিকতা সম্পন্ন । তাদের ত্যাগ সর্বজন স্বীকৃত ও বিদিত। হিলাল ইবনে উমাইয়াহ ও মুরারাহ ইবনে রুবাই । অংশগ্রহণ করেছিলেন বদরের যুদ্ধেও। কা'ব ইবনে মালিক বদরী সাহাবী না হলেও অংশ নিয়েছিলেন অতীতের সকল যুদ্ধে । এসব সত্ত্বেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাকড়াও করলেন তাদেরকে।

তাদের অপরাধ হলো অলসতা। যাই, যাব, যাচ্ছি। আজ কিংবা কাল । সকাল কিংবা বিকাল অলসতার কারণে আর যাওয়া হয়নি তাদের যুদ্ধে । বিরত ছিলো যুদ্ধযাত্রা থেকে । থেকে গিয়েছিলো আন্দোলনের নেতা । প্ৰিয় নবীর বিনা অনুমতিতে। ফরমান জারি করলেন তাদের বিরুদ্ধে। কেও বলবে না কথা তাদের সাথে । করবে না বেচাকেনা । এমনকি লেনদেনও । দিবে না সালাম, এমনকি সালামের উত্তরও। শুরু হলো দুর্বিষহ জীবন । নামাজে যায়। বাজারে যায়। রাস্তায় হাঁটে। কথা বলে না কেহ । বলতে চাইলে মুখ ফিরিয়ে নেয় সবাই। আল্লাহর রাসূলকে (সা.) সালাম দিয়ে ও জবাব পাওয়া যায় না । হায়! হায়! একি অবস্থা? অসহনীয় জ্বালা । তীব্র যন্ত্রণার তীর । বিধতে থাকে সার্বক্ষণিক। হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ । এক দিন নয়, দু'দিন নয়। চল্লিশ দিনের পর ঘোষণা এলো। প্রিয়তমা স্ত্রীদের থেকেও থাকতে হবে আলাদা । পুরোপুরিভাবে নিঃসঙ্গ হলো তারা । জীবন হলো বিষাক্ত। তবু টলছে না তারা। এক বিন্দু বিসর্গ ঈমানের দাবী থেকে । ভরসা করছেন তারা এক আল্লাহর ওপর । আনুগত্য করে চলছেন প্রিয় নেতা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। অপেক্ষায় আছেন আল্লাহর ফয়সালার। ক্ষমাশীল মহান আল্লাহর ক্ষমার। অনুশোচনা আর অনুতাপ চলছে অলসতার জন্য ।

কা'ব ইবনে মালিকের ভাষায় অপেক্ষার পালা হলো শেষ । পঞ্চাশ দিনের মাথায় ফজর পরে ওঠলাম বাড়ীর ছাদে । ধিককার জানাতে লাগলাম নিজেকে নিজে । হঠাৎ কানে বেজে ওঠলো কা'ব ইবনে মালেককে অভিনন্দন । খরাপীড়িত কৃষকের মেঘ দেখার মতো। ব্যাকুল হয়ে লুটিয়ে পড়লাম সিজদায় । দলে দলে লোক এসে বলতে লাগলো । মুবারাকবাদ ! মালিকের ছেলে কা'ব। মহান আল্লাহ তোমার তাওবাহ কবুল করেছেন । আমি ওঠে ছুটে গেলাম মসজিদে নববীতে । প্রিয়নবীর সোহবতে আল্লাহর রসূলের চেহারা উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। কা'ব ইবনে মালিকের সালামের জবাব দিয়ে জানালেন মুবারকবাদ । শুনিয়ে দিলেন কুরআনের আয়াত। কা'ব ইবনে মালিক আল্লাহর সন্তুষ্টিতে দান করলেন । অর্জিত অধিকাংশ সম্পদ । শপথ নিলেন । সত্য বলার কারণে যে আল্লাহ ক্ষমা করলেন । তাকে আর ছাড়বেন না কখনোই এভাবেই সত্যের হলো জয় । আর অসত্যের হলো ক্ষয় । প্রতিষ্ঠিত হলো সত্য । অলসতাই হলো যাবতীয় দুর্দশার কারণ । (সূরা তাওবাহ অবলম্বনে)

প্রশ্ন

১. তাবুক যুদ্ধ হয়েছিলো কতো হিজরী সনে ?

২. সত্য বলা তিনজন সাহাবীর নাম কি?

৩. তিনজন সাহাবীর অপরাধ কী ছিলো?

৪. কতোদিন পর তারা ক্ষমা পেলেন?

৫. তাদেরকে আল্লাহ কি শাস্তি দিয়েছিলেন?