পাত্রী দেখতে যাওয়ার সময় কি কি প্রশ্ন করবেন?

Rumman Ansari   2022-11-06   Developer   islam > Wedding   14792 Share

পাত্রী পছন্দ/ পাত্রী দর্শন

বিষয়বস্তু

ভূমিকাঃ

বিয়ের  উদ্দেশ্য কি?

পাত্রী দর্শন করা কি প্রয়োজন?

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র কি দেখবে ?

বিবাহে পাত্রী দর্শনের নিয়তঃ

বিবাহে বৈধ / অবৈধঃ

বর-কনে নির্বাচনের সময়ঃ

সাধারণ প্রশ্নঃ

ইসলামিক দৃষ্টিকোণঃ

নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য ?

বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে ভেবে নিনঃ

 

ভূমিকাঃ

পত্নী পুরুষের সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গিনী, সন্তানদাত্রী, জীবন-সঙ্গিনী, গৃহের গৃহিণী, সন্তানের জননী, হৃদয়ের শান্তিদায়িনী, রহস্য রক্ষাকারিণী, আনুগত্য পালনকারিণী, তার সুখী সংসারের প্রধান সদস্যা। সুতরাং এমন সাথী নির্বাচনে পুরুষকে সত্যই ভাবতে হয়, বুঝতে হয়। শুধুমাত্র প্রেম, উচ্ছৃঙ্খলতা ও আবেগে নয়; বরং বিবেক ও দিমাগে সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে হয়।

সাধারণতঃ মানুষ তার ভাবী-সঙ্গিনীর প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-যশ-খ্যাতি, ধন-সম্পদ, কুলীন বংশ, মনোলোভা রূপ-সৌন্দর্য প্রভৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার জীবন-সঙ্গ লাভ করতে চায়; অথচ তার আধ্যাত্মিক ও গুণের দিকটা, দ্বীনদারি বা ধার্মিকতা গৌণ মনে করে। যার ফলে দাম্পত্যের চাকা অনেক সময় অচল হয়ে রয়ে যায় অথবা সংসার হয়ে উঠে তিক্তময়। কিন্তু জ্ঞানী পুরুষ অবশ্যই খেয়াল রাখে যে,

‘‘দেখিতে পলাশ ফুল অতি মনোহর,

গন্ধ বিনে তারে সবে করে অনাদর ।

যে ফুলের সৌরভ নাই, কিসের সে ফুল?

কদাচ তাহার প্রেমে মজেনা বুলবুল ।

গুণীর গুণ চিরকাল বিরাজিত রয়,

তুচ্ছ রূপ দুই দিনে ধূলিসাৎ হয়। ”

বিয়ের  উদ্দেশ্য কি?

বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা। চরিত্রের সুরক্ষা ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আপনি যদি এমন নারীকে বিয়ে করেন, যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় কিংবা ভালো লাগে, তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি আসবে। পাশাপাশি পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে। (তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- তাকওয়া বা আল্লাহভীতি)। কারণ, এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্যজীবনে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়।

পাত্রী দর্শন করা কি প্রয়োজন?

পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে স্বচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।

অনুষ্ঠান করে ক্ষণেকের দেখায় পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও দেখা যায়। পাত্রীর এই বিয়েতে কোন অমত আছে কিনা, সেটা যাচাই করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

দেখতে যাওয়ার আগেই ঐ পরিবার সম্পর্কে মোটা ধারণা নিয়ে যাবেন। আশেপাশে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে তার থেকে আগেই খবরাখবর নিয়ে তারপর যেতে পারেন।

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র কি দেখবে ?

পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।

এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।

বিবাহে পাত্রী দর্শনের নিয়তঃ

  • পাত্রী দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে ।
  • পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে ।
  • বিয়ে করার ক্ষেত্রে কোনো মেয়েকে গ্রহণ ও বর্জন যেন হয় দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে।

বিবাহে বৈধ / অবৈধঃ

  • পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ ।
  • পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে।
  • তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা।
  • তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় ।
  • বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ ।
  • অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয় ।
  • পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ । কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম ।
  • পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া।
  • এই সময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,

‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’

  • পাত্রী পছন্দ না হলে, যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়।
  • যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিৎ নয়।

 বর-কনে নির্বাচনের সময়ঃ

১। পাত্র বা পাত্রী কোন্ স্কুলে পড়েছে জানার আগে কোন্ পরিবেশে মানুষ হয়েছে--তা জানার চেষ্টা করুন। কারণ, অনেক সময় বংশ খারাপ হলেও পরিবেশ-গুণে মানুষ সুন্দর ও চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠে।

২। পাত্র বা পাত্রীর চরিত্র দেখার আগে তার বাপ-মায়ের চরিত্রও বিচার্য। কারণ, সাধারণতঃ ‘আটা গুণে রুটি আর মা গুণে বেটি’ এবং ‘দুধ গুণে ঘি ও মা গুণে ঝি’ হয়ে থাকে। আর ‘বাপকা বেটা সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ না হো তো থোড়া থোড়া।’ বংশ ভালো, দ্বীনদার ফ্যামিলি হলে অনেকাংশেই মেয়েরা ভালো হয়ে থাকে।

যে মানুষকে নিয়ে আমার দরকার কেবল তারই চরিত্র ও ব্যবহার বিবেচ্য । তবে আগে থেকেই মেয়ের বাড়ির বংশ কেমন জেনে নিবেন। গোবরে পদ্ম ফুল ফোটতে পারে কিন্তু তারপরও ঐ ফুলের নিচে গোবরই থাকে। সুতরাং সাবধান।

৩। বিবাহ একটি সহাবস্থান কোম্পানী প্রতিষ্ঠাকরণের নাম। সুতরাং এমন সঙ্গী নির্বাচন করা উচিৎ যাতে উভয়ের পানাহার প্রকৃতি ও চরিত্রে মিল খায়। নচেৎ অচলাবস্থার আশঙ্কাই বেশী।

৪। আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, মেয়ে বাড়ির বাহিরে কেমন যায়! যারা বাজারে বা এখানে সেখানে পার্কে বেশি ঘুরাঘুরি করে তাদের থেকে তেমন ভালো কিছু আশা করা যায় না, তারা আপনার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলতেই পারে।

৫। আপনি যদি বুঝতে চান মেয়েটা কেমন হবে তাহলে তার মা খালাদের সম্পর্কে জানতে পারলেও কিছুটা অনুমান করতে পারবেন। অধিক সন্তান জন্মদানে সক্ষম কিনা সেটা মা খালাদের দেখে বুঝা যায়।

৬। সাধারণ প্রশ্ন, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এর বিভিন্ন প্রশ্ন করে মন মানসিকতা বুঝে নেওয়া দরকার।

সাধারণ প্রশ্নঃ

  • আপনার নাম কি?
  • আপনার বাবার নাম কি?
  • পড়ালেখা কোথায় করেছেন?
  • আপনার বাড়িতে কে কে আছে?
  • ভাইবোন কয়জন?
  • ছেলের কাছে কি চান?
  • নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা গুলো একে অপকে জানানো। তার কি করতে ভালো লাগে? কি করতে ভালো লাগে না?
    • বই পড়তে? ভ্রমন করতে? না মুভি দেখতে?
  • তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তার জীবনে সে সবচেয়ে ভালো কাজ কি কি করেছে?
  • মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করবে কিনা এটা নিশ্চিত হয়ে নেয়া ভালো। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের চাপে পড়ে সে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে, সেটা জেনে নিন। মেয়ের অমতে জোর করে বিয়ে দিলে সে সংসার বেশিদিন টেকে না।
  • এখনকার মডার্ন ফ্যামিলির মেয়েরা চায় বিয়ের পর স্বামীর সাথে আলাদা থাকতে, তারা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে থাকতে চায় না। পাত্রী দেখার সময় মেয়ের কাছ থেকে জেনে নেয়া ভালো যে– সে বিয়ের পরে সবার সাথে এক সংসারে থাকতে চায় নাকি আলাদা থাকতে চায় ।
  • মেয়ের কাছ থেকে তার বিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা জানবেন এবং আপনার মতামতও জানিয়ে দেবেন। [চাকরি]
    • আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন। কি করতে চান? জীবনে নিজেকে কিভাবে দেখতে চান? সেখানে আপনার সহযাত্রীকে কোন ভূমিকায় দেখতে চান? কোন প্রকার শখ আছে? আপনার কোনো স্বপ্ন আছে? আপনি কি বিয়ের পর চাকরি করতে ইচ্ছুক?
  • পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন ?
  • আপনি কেন বিয়ে করতে চান বা বিয়ের উদ্দেশ্য কি? আমি আপনাকে কেন বিয়ে করব?
  • সে উচ্চবিলাসিতা প্রিয় কি না? আত্মতুষ্টি হতে পারবে কি না? অন্যের সাথে আপনার তুলনা, সংসারের তুলনা করবে কি না?

ইসলামিক দৃষ্টিকোণঃ

দ্বীনদারি সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা:

হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নারীদের (সাধারণত) ৪টি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তাহলো-

  • > তার ধন-সম্পদ।
  • > বংশমর্যাদা।
  • > রূপ-সৌন্দর্য। এবং
  • > দ্বীনদারি বা ধার্মিকতা।

তবে তুমি দ্বীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।’ (আবু দাউদ)

উল্লেখ্য যে, সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য বোঝায় না। বরং মনন ও সুকুমারবৃত্তির সৌন্দর্যও এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও অপরিহার্য। যদিও মানুষ কারো গুনাগুণ বিচারের আগে তার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে।

বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টি আপেক্ষিক। কারণ, সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারও কাছে ফর্সা ভালো লাগে, আবার কারও কাছে ভালো লাগে মৃদু শ্যামলা।

আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।

ইসলামিক প্রশ্নঃ

  • ধর্মকে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ? কিভাবে আপনি ধর্ম পালন করেন?
  • তার ইমানদারি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। তার দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ? আখিরাত এর জীবন নাকি দুনিয়ার সম্পদ?
  • তাকে জিজ্ঞেস করবেন সবচেয়ে বড় ধর্ম কি? ইসলাম ধর্ম না মানবধর্ম?
  • নামায পড়ে কি না?
  • কুরআন পড়তে জানে কি না ? আপনার কি কুরআন পড়া হয় নিয়মিত? শেষ কবে কুরআন পড়েছিলেন? কুরআন কি অর্থসহ ও তাফসির সহকারে কখনো পড়েছেন?
  • যেকোন সুরার অর্থ বলতে পারেন কি না ?
  • আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, যার চাইতে বেশি ভালবাসা আর কাউকে সম্ভব না?
  • সে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিনা?
  • আমি যদি আল্লাহর অবাধ্য হই, তারপরেও কি স্ত্রী হিসেবে আমার আনুগত্য করবেন?
  • মধ্যম পন্থা বলতে আপনি কি বোঝেন?
  • সে আপনার বাবা মায়ের সেবা, দায়িত্ব পালন, বয়স্ক হল,অসুস্থ বাবা মায়ের সেবা করবে কি না?
  • আপনি কি পর্দা রক্ষার ব্যাপারে সচেতন?
  • ইসলাম নিয়ে আপনার ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা কেমন?

একজন খুবই পরিপক্ক মানুষের কাছে অনেক বছর আগে শোনা কথা, বিয়ে করার সময় গুন নয় দোষ দেখতে হয়।বুঝে নিতে হয়, তার এই দোষগুলো আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন। আর বিয়ে করার পর দোষ আর কোনোদিন দেখতে হয় না। তাকে তার স্বভাব, চরিত্র বলে ধরে নিতে হয়। তখন তার গুন দেখতে হয়।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা। আপনি যখন এমন মানুষের সাথে প্রথমবার মুখামুখি হন, তার প্রথম কয়েক মূহূর্তে আপনার অবচেতন মনে যা আসবে, তা সাধারণত সত্যি হবে। এর কিছুক্ষন পর থেকেই, আপনি নিজের বুদ্ধি লাগিয়ে জোড়-বিয়োগ করা আরম্ভ করে দেবেন ও প্রথম প্রতিচ্ছবিকে চেপে দেবেন। নিজেকে বুঝানো আরম্ভ করে দেবেন। তাই প্রথম দেখায়, প্রথম মূহূর্তের যা আপনার মনে হবে, তা কোনোদিন গৌণ করে দেখবেন না। অবশ্য এটা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিত্বের উপর। আপনি নিজে কতটা নিরপেক্ষ হয়ে বস্তুস্থিতি আহরন করেন।

এই ব্যাপারটা সহজ করার জন্য, আবশ্যক হচ্ছে আপনার একান্ত নিজের মতন ব্যবহার করা। তাকে বিশেষ ভাবে জিজ্ঞাসা করার মতন বিষয় না খোঁজা। মানুষটিকে সহজ করে তোলা।  মানবিক অনুভূতি গুলো কেমন সেটাও যাচাই করে নিতে হবে। সবার সাথে কিন্তু সব কথা শেয়ার করা যায় না। কিংবা ইচ্ছে থাকলেও হয়ত কমর্ফোট ফীল হয় না। আপনার কাজ হবে, আপনার ভবিষ্যত জীবনসংঙ্গী যেন তার সকল কথা আপনাকে বলতে কমর্ফোট ফীল করে। তবে আমার মনে হয়, একটি প্রশ্নের উত্তর শুনে নেওয়া বা বুঝে নেওয়া খুব জরুরী। প্রেম, ভালবাসার ব্যাপারে মানসিকতা ইত্যাদি বাদ দিয়ে মানুষটি কি করতে চায়। কি করলে সুখী হয়। তার নিজের মতন করে নিজের জন্য সুখের পরিভাষা কি। সে জীবনে কিসের দিকে ছুটছে। সহজ করে বললে সে যা ভালবাসে তা কি আপনি ভালবাসেন। আপনি না ভালবাসলেও তা কি আপনার অপছন্দের কারণ। দুইজনের জীবন দর্শন কি একই কিনা । এই বিষয়গুলি বুঝে নেওয়া ভালো। একজন নিজে সুখী মানুষ আপনার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। আপনার তাকে নিজের মতন সুখে থাকার পরিস্থিতি দিতে হয়। তাই আপনাকে দেখতে হয়, সেটা আপনার সাম্যর্থ কি না। পছন্দ/অপছন্দের অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু জীবন দর্শন একই হলে ভালো। যদি জীবন দর্শন একই না হয় তাহলে আপনারা একসাথে থাকবেন ঠিকই কিন্তু জীবন চলবে আলাদা আলাদা।

মেয়েদের আচার-আচরণের ৭টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেই তাকে ভালো মেয়ে বলে মনে করেন সবাই। আচার-আচরণের প্রশ্ন যুক্ত করা হলো।

১. সেবিকার মনোভাব : একজন পুরুষ সঙ্গিনী হিসেবে এমন একজন ভালো মেয়ে চান, যিনি কষ্টের সময় দুই হাত বাড়িয়ে দেবেন। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে বাচ্চা কেঁদে উঠলে তাকে আগলে রাখবে। অর্থাৎ, যে মেয়েদের মনে আন্তরিক মমত্ববোধ রয়েছে এবং তার মাঝে সেবিকার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান তারাই ভালো মেয়ে বলে বিবেচিত হয়।

  • আপনারমায়ের শরীর খারাপ হলে আপনি কি রান্না করেন?
  • আপনি কি কি কাজে আপনারমাকে সাহায্য করেন?
  • নিজের(ছোট ভাইবোনদের) জামা কাপড় কে পরিষ্কার করে?
  • স্বামী অনেক পরিশ্রম করে বাড়িতে ফিরলে আপনি কী করবেন?
  • অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য আপনি কি কি করেছেন?
  • প্রভৃতি।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা : একজন পুরুষ যখন আপনাকে তার হৃদয়টা দিয়ে দেবেন, তখন তিনি চাইবেন তা যেন ভেঙে না যায়। পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়, এমন মেয়েই খোঁজেন পুরুষরা। বিশ্বাসযোগ্য বলে যাকে মনে হয়, তিনিই ভালো মেয়ে।

  • আপনারমতে বিশ্বাস কি?
  • এমন কোন ঘটনা যা আপনি আপনারআব্বা/মা /ভাই/বোনদের যা বলেলনি ? যা আপনি আমাকে বলতে চান।
  • আপনি কাকে সবচাইতে বেশি বিশ্বাস করেন? কেন বিশ্বাস করেন?

৩. সততা : এমন সঙ্গিনী চান পুরুষরা যাকে নিয়ে নির্দ্বিধায় যেকোনো জায়গায় যাওয়া যায়। যে কিনা সঙ্গীর সঙ্গে তার সম্পর্ককে কখনো ভুলে গিয়ে অন্য কিছু করে বসবেন না। নারীদের মাঝে প্রতারণা প্রবৃত্তি থাকলে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন পুরুষরা। সততা যার মাঝে পরিষ্কার, তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভালো মেয়ে হয়ে ওঠেন।

  • আমানত কি?
  • আপনারবন্ধু-বান্ধব কতগুলো আছে?

৪. নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব : পুরুষরা এমন নারীর স্বপ্ন দেখেন যিনি কিনা সঙ্গী ভেঙে পড়লে তাকে সর্বশক্তি দিয়ে তুলে আনার চেষ্টা করবেন। সঙ্গীর যেকোনো সমস্যার কথা তাকে জানানো যায় এবং ভালো পরামর্শ পাওয়া যায়। যিনি প্রয়োজনে হাল ধরার ইচ্ছাও রাখেন। এমন মেয়ে নিঃসন্দেহে ভালো একজন মেয়ে।

  • জীবনের অগ্রাধিকার তালিকায় আপনি কাদেরকে রাখতে চান?/ কাকে আপনি সব চাইতে বেশি ভালোবাসেন?
  • এমন কেউ(আব্বা/মা/ভাই/বোনদের/ বন্ধু-বান্ধব) কি আছে যাকে আপনি আপনারজীবনের সব সমস্যার কথা খুলে বলেন?
  • ভবিষ্যতে আর্থিক সমস্যা হলে আপনি কি মানিয়ে নিতে পারবেন?

৫. নিরহংকার : অহংকারী নারীদের একেবারে পছন্দ করেন না পুরুষরা। কিন্তু তার ভেতরের গুণগুলোকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেন। আপনার মাঝে ভালো কোনো গুণ থাকলে তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবেন পুরুষরা। কিন্তু এ নিয়ে অহংকারী মনোভাব মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। যার অহংকার নেই, তারই ভালো মেয়ের মন্তব্য জুটে যায়।

  • আপনি কি চুপচাপ থাকতে বেশি পছন্দ করেন? নাকি সবার সঙ্গে আনন্দ মজা করে থাকতে বেশি পছন্দ করেন?
  • আপনি কি জয়েন্ট ফ্যামেলি পছন্দ করেন?
  • বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঝগড়া হলে আপনার অপরাধ না থাকলেও আপনি কি আগে কথা বলেন?

৬. বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন : আদালতের বিচারকের মতো জ্ঞান-বুদ্ধির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ বিচারবুদ্ধি নারীদের কাছে আশা করেন পুরুষরা। হতে পারে তা সঙ্গীর কালো অতীতকে কখনো তুলে না আনা অথবা পরিস্থিতি অনুধাবন করে এমন কিছু না করা যা পরিস্থিতি বদলে দেয়। কিন্তু ন্যুনতম বিচারবুদ্ধি থাকলেই তিনি ভালো মেয়ের দলের মানুষ।

  • মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য কি?
  • আপনি কি ধরনের পোশাক পছন্দ করেন?
  • কোন নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করেন কিনা?
  • কখনও কি ভেবেছেন মিশরের পিরামিডগুলো কিভাবে এত বড় বড় বানালো অতীতে, যখন আধুনিক বিজ্ঞানের কোন যন্ত্রও ছিল না?
  • জানেন কি মূল্যবৃদ্ধি কিভাবে হয়?

৭. স্বচ্ছতা : নারীর মাঝে মিথ্যা থাকলে তাতে কোনো ছাড় দিতে চান না পুরুষরা। যে নারী বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে ডেটিং করতে যান, তাকে নিশ্চয়ই ভালো মেয়ে বলবেন না কোনো পুরুষই। কিন্তু একজন মেয়ে তার পুরোটা স্বচ্ছ থাকলেই তিনি সবার চোখে ভালো মেয়ে হয়ে ওঠেন।

  • আপনি কি বেশি ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করেন? নাকি বাড়িতে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন?
  • রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা, চা খেতে বেশি ভাল লাগে, নাকি এসিতে বসে স্ন্যাকস-কফি?
  • দুঃখ পেলে কি করেন?
  • কি ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত আপনি?

“এমন পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ, যে হবে পুণ্যময়ী, সুশীলা, সচ্চরিত্রা, দ্বীনদার, পর্দানশীন; যাকে দেখলে মন খুশীতে ভরে ওঠে, যাকে আদেশ করলে সত্বর পালন করে, স্বামী বাইরে গেলে নিজের দেহ, সৌন্দর্য ও ইজ্জতের এবং স্বামীর ধন-সম্পদের যথার্থ রক্ষণা-বেক্ষণা করে।“

জ্ঞানীরা বলেন, ‘তোমার চেয়ে যে নীচে তার সঙ্গ গ্রহণ করো না। কারণ, হয়তো তুমি তার মূর্খতায় কষ্ট পাবে এবং তোমার চেয়ে যে উচেচ তারও সাথী হয়ো না। কারণ, সম্ভবতঃ সে তোমার উপর গর্ব ও অহংকার প্রকাশ করবে। তুমি যেমন ঠিক তেমন সমমানের বন্ধু, সঙ্গী ও জীবন-সঙ্গিনী গ্রহণ করো, তাতে তোমার মন কোন প্রকার ব্যথিত হবে না।’ তবে ব্যতিক্রম তো থাকেই সব জায়গায়।

 

নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য?

সমাজে নারী এবং পুরুষ এক নয় এবং এক হতেও পারে না। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা স্বভাব, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজন। নারী-পুরুষ সমাজের একে অন্যের পরিপূরক। তেমনিভাবে নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যও এক নয়। এক মনে করাও ঠিক নয়। বরং উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে পিতৃত্বের ভূমিকা পালন করা, পরিবারের, স্ত্রী, সন্তান ও অন্য সদস্যদের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। আর নারী বা মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে মাতৃত্বের ভূমিকা পালন করা, সন্তান লালন-পালন ও যথাযথ শান্তি, নিরাপত্তা ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা। অতএব, নারী পুরুষের দায়িত্ব এক মনে করার মানেই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ।

বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে ভেবে নিনঃ

  • আপনি কি ভালোবাসার মর্মার্থ জানেন?
  • কেবল যৌন-সুখ লুটাই প্রকৃত সুখ নয়---তা জানেন তো?
  • আপনি কি তাকে সুখী ও খুশী করতে পারবেন?
  • আপনি তাকে চিরদিনের জন্য নিজের অর্ধেক অঙ্গ মনে করতে পারবেন?
  • আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার চেয়ে দাম্পত্য-সুখ রক্ষা করতে কি অধিক সচেষ্ট হতে পারবেন?
  • আপনাদের উভয়ের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝির সময় সন্ধির উদ্দেশ্যে একটুও নমনীয়তা স্বীকার করতে পারবেন তো?
  • বিবাহ আপনার বহু স্বাধীনতা হরণ করে নেবে, সে কথা জানেন তো? দাম্পত্য কেবল কয়েক দিনের সফর নয় তা জানেন তো?
  • বলা বাহুল্য, বিবাহ কোন মজার খেলা নয়। বিবাহ কাঁধের জোঁয়াল। বিবাহ একটি অনুষ্ঠানের নাম, যাতে কনের আঙ্গুলে আংটি এবং বরের নাকে লাগাম পরানো হয়। স্ত্রীর গলায় হার এবং স্বামীর গলায় বেড়ি পরানো হয়। বিবাহ ‘দিল্লী কা লাড্ডু; (হাওয়া-মিঠাই) যো খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা, আওর যো নেহীঁ খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা!

আপনি যেমন উত্তম-পবিত্র জীবনসঙ্গী খুঁজছেন, তা মানুষ দিতে পারবে না, কিন্তু আল্লাহর পক্ষে আপনার ধারণা থেকেও উত্তম কিছু দেওয়াও কোন বিষয়‌ই না। দেখুন, সমগ্র মানবজাতি চেষ্টা করলেও আল্লাহ তাআলা যদি ইচ্ছা না করেন, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না।  আবার, আল্লাহ্ তা'আলা ইচ্ছা করলে কেউই তা রুখতে পারবে না, যতোই প্রতিকূলতা থাক না কেন। তাই শুধু তাঁরই অভিমুখি হোন। তাঁর কাছেই চাইতে থাকুন। তাই, যিনি দিতে পারবেন, তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন । নিশ্চয়ই দু'আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়।