বনী কায়নুকা'র সঙ্গে ব্যবহার;
বনী কায়নুকা ছিল প্রথম ইয়াহুদী গোত্র যারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে, তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করে, মুসলমানদের কষ্ট দেয়। অনন্তর রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে অবরোধ করেন । পনর রাত এ অবস্থায় অতিক্রান্ত হয় । অবশেষে তারা মস্তক অবনত করে এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ফয়সালা মেনে নিতে সম্মত হয় । বনী কায়নুকা'র মিত্র আবদুল্লাহ ইবন উবাই (মুনাফিক সর্দার) তাঁর খেদমতে তাদের নিমিত্ত সুপারিশ পেশ করে। অনন্তর তিনি তাদের কথা বিবেচনাপূর্বকঅবরোধ তুলে নেন। [১] কায়নুকা'র ছিল সাত শত যুদ্ধবাজ সৈনিক এবং পেশায় এদের অধিকাংশই স্বর্ণকার ও দোকানদার ছিল। [২]
নবী করীম (সা) ঐ সব ইয়াহুদীদেরকে এই শর্তে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দেন যে, তারা মদীনা থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে। অনন্তর তাদের বেশির ভাগ লোক পরম নির্ভয়ে সিরিয়ার দিকে চলে যায় এবং তাদের অস্থাবর সম্পত্তিও সাথে নিয়ে যায় । বনী কায়কা তাদের বিদ্রোহ ও প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের কারণে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষা করছিল, কিন্তু তারা নিরাপদে ইয়াছরিব থেকে চলে যায় । [৩]
কা'ব ইবনুল আশরাফ ছিল একজন বিরাট ইয়াহুদী সর্দার। সে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আগাগোড়া কষ্ট দিত এবং অভিজাত মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে গায়কী কবিতা বলত। বদর যুদ্ধের পর সে মক্কায় গিয়ে কাফিরদের রাসূলুল্লাহ (সা) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে শুরু করে। এমতাবস্থায় সে মদীনায় পৌছে । রাসূলুল্লাহ (সা) তার আগমন সংবাদ পেয়ে বলেন : কা'ব ইবনুল আশরাফ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তার কি কেউ কোন ব্যবস্থা করতে পারে? আনসারদের কিছু লোক এই খেদমত আঞ্জাম দেবার জন্য তক্ষুণি দাঁড়িয়ে গেল এবং তার কম্ম সাবাড় করল । [৪]
[তথ্যসূত্র: নবীয়ে রহমত - সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী - আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী অনূদিত - পৃষ্ঠা নম্বর: 245-46]
১. প্রাগুপ্ত, ৪৭-৪৯।
২. যাদুল মা'আদ, ১ম খণ্ড, ৩৪৮ পৃ.।
৩. সীরাত ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড, ৪৮ পৃ. মন্টগোমারী ওয়াট তাঁর Mohammad Prophet and statesman ” নামক গ্রন্থ বলেন : বনী কায়নুকা'র বহিষ্কার ছিল এমন একটি কাজ যা নবী করীম (সা)-এর কেন্দ্রকে সুদৃঢ় করে। এই বহিষ্কারের পেছনে কায়নুকা'র ইয়াহুদী ও কতক মুসলিম বণিকের মধ্যে সৃষ্ট ঝগড়া কাজ করেছে বলা হয় । এটি মদীনার এক বাজারে সংঘটিত হয় ।
মন্টগোমারী ওয়াট এ ব্যাপারেও একমত নন যে, এই বহিষ্কারের কারণ বনী কায়নুকায় একজন মুসলিম মহিলার ওপর ইয়াহুদীদের সীমা লংঘন ও বাড়াবাড়ি ছিল যা সীরাত গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত । তিনি লিখেন যে, মুহাম্মদ (সা) ইয়াহুদীদের বহিষ্কারেরর পদক্ষেপের কারণ এর চেয়ে গভীর যা সেই সাময়িক ঘটনার প্রতি সম্বন্ধযুক্ত ও সম্পর্কিত করা হয় । প্রকৃত কারণ ছিল “ইয়াহূদীদের মুসলিম সমাজ জীবনে মিশে না যাওয়া”।
তিনি আরও লেখেন যে, মুহাম্মদ (সা) ইয়াহুদী ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মক্কার কুরায়শদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারেও অবগত হয়ে থাকবেন যা মুসলমানদের ও ইয়াহুদীদের মধ্যে পারস্পরিক চুক্তির প্রাণসত্তার পরিপন্থী মনে করা হয়েছে । উস্তাদ মুহাম্মদ আহমদ বাশমীলের বনী কায়নুকা যুদ্ধ দেখুন ।
৪. যাদু'ল-মা'আদ ২য় খণ্ড, ৩৪৮, সংক্ষেপে।