হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের নবুয়তের পর জীবন

রাসূল সাঃ এর মাক্কী জীবন ১৩ বছরের এবং মাদানী জীবন ১০ বছরের।

রাসূল সঃ নবুওয়াতের প্রথম তিন বছর গোপনে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং নবুয়তের চতুর্থ বছর থেকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করে।

পূর্ব দিকে

চাচাতো ভাই।

ওয়ারাকা বিন নফল খাদিজা রাঃ চাচাতো ভাই প্রথম ওহী নাযিলের পর খাদিজা রাঃ রাসূল সঃ কে তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সর্বমোট সাতটি পদ্ধতিতে ওহী নাযিল হয়েছে এর চতুর্থ স্তর হচ্ছে ঘন্টার আওয়াজের ন্যায়।

ওমর রাঃ এর বোন এবং ভগ্নিপতি ইসলামের প্রথম পর্যায়ে ইসলাম কবুল করেছিলেন তার বোনের নাম ফাতেমা বিনতে খাত্তাব ভগ্নিপতির নাম সাঈদ বিন যায়েদ।

রাসূল (সাঃ) সাফা পাহাড়ের শানুদেশের সবচেয়ে উঁচু পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ইসলামের দিকে আহ্বান জানান।

রাসূল (সাঃ) এর ফুফু ছয়জন, উমাইমা, বাররা, আতেকা, সাফিয়্যা, আরওয়া, উম্মে হাকীম।

বেলাল রাঃ উমাইয়্যা বিন খলফ জুমহীর গোলাম ছিলেন।

হযরত আবু বকর রাঃ একটি কালো গোলাম কিংবা ২০০ বা ২৮০ দিরহামে খরিদ করে আজাদ করে দেন।

আম্মারের মাতা সুমাইয়্যার লজ্জাস্থানে আবু জাহল বর্শা দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম শহীদ রমণী।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাস-দাসীরা ইসলাম গ্রহণ শুরু করেন এবং তাদের উপর অত্যাচারের মাধ্যমে মুসলমানদের উপর অত্যাচারের সূচনা হয়।

নওফল বিন খুওয়াইলিদ আবু বকর (রাঃ) ও তালহা বিন ওবাইদুল্লাহকে নামাজ ও দীন থেকে বিমুখ করার জন্য এক রশিতে বেঁধে রেখেছিলেন।

কুরাইশরা ওয়ালিদ বিন মুগিরার ছেলে আম্মারার বিনিময়ে আবু তালেব এর নিকট রাসূল সাঃ কে চেয়েছিলেন।

রাসুল পাক সাঃএর উপর জুলুম নির্যাতনের ক্ষেত্রে আবু লাহাব সবার সামনে ছিলেন এবং তাদের ইমাম ছিলেন।

আবু জাহেল যখন বলতো কে মোহাম্মদের উপর উটের ভুরি চাপিয়ে দিতে পারবেন তখন উকবা বিন আবী মুঈত দাঁড়িয়ে যেতো।

উমাইয়্যা বিন খলফ রাসূল সাঃ এর সামনে পিছনে নিন্দা করতো।

রাসূল সাঃ গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আরকাম বিন আবুল আরকাম মাখহুযুমীর ঘরকে বেছে নিয়েছিলেন। [তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতূম বা মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা - শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) -অনুবাদ - আব্দুল খালেক রহমানী, মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ]

ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাবায়ে কেরাম পাহাড় বা উপত্যকায় নামাজ আদায় করতে একদিন কুরাইশ কাফেরদের সাথে দেখা হয়ে যায় এবং সংঘর্ষ হয়। তখন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাঃ একজনকে আঘাত করেন এবং তার রক্ত ঝরে। [তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতূম বা মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা - শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) -অনুবাদ - আব্দুল খালেক রহমানী, মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ]

রাসূলে করীম সাঃ নামাজ পড়ছিলেন। যখন তিনি সিজদায় যান তখন উকবা বিন আবী মুঈত রাসূল সাঃ এর ঘাড় মোবারক পা দিয়ে চেপে ধরেন।

হযরত আমীরে হামযা রাঃ নবুওতের ষষ্ঠ বছরের শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। বিশুদ্ধ মতে মাসটি ছিল যিলহজ্জ মাস। [তথ্যসূত্র: আর-রাহীকুল মাখতূম বা মোহরাঙ্কিত জান্নাতী সুধা - শাইখুল হাদীস আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) -অনুবাদ - আব্দুল খালেক রহমানী, মুয়ীনুদ্দীন আহমাদ]

আমীরে হামযা রাঃ ইসলাম গ্রহণের তিনদিন পর ওমর ফারুক রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন।

পথিমধ্যে নুআইম বিন আব্দুল্লাহ নুহাম এবং বনু যুহরা কিংবা বনু মাখযূমের এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়।

খাব্বাব বিন আরত রাঃ উমাইরের বোন ফাতিমা ও তার স্বামীকে সূরা ত্বহা পড়াচ্ছিলেন।

ধনসম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রস্তাব যখন রাসূল সাঃ ফিরিয়ে দিলেন তখন তারা বললেন তুমি যদি মৃতদের মধ্য থেকে বিশেষ করে কুসাই বিন কিলাবকে জীবিত করে দিতে পারো তাহলে আমরা তোমার উপর ঈমান আনব।

হামযা ও ওমর রাঃ ইসলাম গ্রহণের পর কাফেররা অত্যাচার ভয় পেয়ে গিয়েছিল এবং তারা রাসূলে পাক সাঃ কে চার দফায় প্রস্তাব দিয়েছিল।

আবু জাহেল যখন রাসূল সাঃ কে পাথর দিয়ে আঘাত করতে গিয়েছিলেন তখন সে তার এবং রাসূল সাঃ এর মধ্যে বিশালাকার একটি উট দেখতে পেয়েছিল। ইবনে ইসহাক রঃ বলেছেন, তিনি ছিলেন জিবরাঈল আঃ।

মক্কার কাফেররা যখন রাসূল সাঃ কে কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না তখন তারা নজর বিন হারিসের সঙ্গে এক বা দুজন লোক সহকারে মদিনার ইহুদিদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মদিনার ইহুদীরা রাসূল সাঃ কে তিনটি প্রশ্ন করতে বলেছিলেন ১. আসহাবে কাহাব সম্পর্কে। ২. ওই ব্যক্তি সম্পর্কে যে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সীমান্ত সফর করেছিল। ৩. রুহ কি? হাকিকতে এটা কেমন ?

বাদশা যুল কারনাইন পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত সফর করেছিলেন।

মুহাসাব উপত্যকায় বসে তারা বনু হালিম ও বন মুত্তালিবের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্নের শপথ গ্রহণ করে।

এটি নবুয়তের সপ্তম বছরে সংঘটিত হয় এবং তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল।

কুরাইশরা বনু হা শিম ও মুত্তালিবের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের যে চুক্তি সই করেছিলেন সেই চুক্তি ছিড়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হিশাম বিন আমর।

রাসূল সাঃ এর চাচা আবু তালিব এবং স্ত্রী খাদিজা রাঃ নবুয়তের দশম বছরে ইন্তেকাল করেন।

রাসূল সাঃ 25 বছর খাদিজা রাঃ সাথে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছিলেন

৬০ মাইল।

নবুয়তের দশম বছরের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খ্রিস্টাব্দের মে'র শেষ অথবা জুনে শুরুতে।

তার সফরের রাসুল সাঃ এর সাথে ছিলেন তার পালক পুত্র বা ক্রীতদাস যায়েদ বিন হারেসা রাঃ।

রাসূল সাঃ তায়েফে পৌঁছে সর্বপ্রথম আমর বিন উমাইর সাকাফীর ছেলে আবদে ইয়ালীল মাসঊদ ও হাবিবের সাথে দেখা করেন এবং তায়েফে দশ দিন অবস্থান করেন।

তায়েফ বাসি যখন তাদের গোলাম ও বাচ্চাদের রাসূল (সাঃ) এর পেছনে লেলিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল। রাসূল (সাঃ) তখন তায়েফ থেকে তিন মাইল দূরে উতবা ও শাইবার আঙ্গুর বাগানের দেয়ালের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

উতবা ও শাইবার গোলাম আদ্দাসকে রাসূল সাঃ নিনাওয়ার নবী ইউনুস বিন মাত্তার সম্পর্কে বলেছিলেন।

জিবরাঈল আঃ পাহাড়ের ফেরেস্তাকে নিয়ে কারনুল মানাযিলে রাসূল সাঃ এর সাথে দেখা করেন এবং মক্কাবাসীকে আবু কুবাইস ও কুআইকিয়ান পাহাড়ের মাঝে ফেলে এক চাপা দিয়ে শেষ করার অনুমতি চান।

তায়েফ থেকে ফিরে এসে রাসূলে পাক সাঃ মুতঈম বিন আদী এর কাছে নিরাপত্তা চেলে তিনি সম্মতি জানান।

রাসূল সাঃ শাওয়াল মাসে তায়েফ গিয়েছিল এবং ফুল কা'দ মাসে ফিরে এসেছিলেন।

সুয়াইদ বিন সামিত রাঃ আরবের একজন খ্যাতিমান কবি ছিলেন এবং তিনি ইয়াসরিবের অধিবাসী ছিলেন।

তিনি ইয়েমেনের অধিবাসী ছিলেন। ইয়েমিনের বিশাল একটা অঞ্চল জুড়ে তার গোত্র বসবাস করত।

এ বছরই অর্থাৎ একাদশ নবুওয়াত বর্ষের শাওয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর। হিজরতের প্রথম বছর শাওয়াল মাসে মনোনীত নয় বছর বয়সে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) স্বামীগৃহে পদার্পণ করেন।[1] (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রিয়তম সাহাবী আবূ বাকর (রাঃ)-এর ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল আল্লাহর নাবী (ﷺ)-এর সঙ্গে রক্ত সম্পর্ক গড়ে তোলা। এ প্রেক্ষিতেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল এ অসম বিবাহের।)

১২ জন নকীব মনোনীত করা হয়। তার মধ্যে নয় জন খাযরাজ গোত্রের এবং তিনজন আউস গোত্রের।

সাদ বিন উবাদা এবং মুনযির ইবনে আমর এক সাথে ছিলেন। সাদ বিন উবাদা ধরা পড়ে গিয়েছিলেন।

না

১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে ঠিক তিন বছরের মাথায় বয়কট শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে রজব মাসে আবু ত্বালিবের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে আবু জাহল, আব্দুল্লাহ ইবনু আবী উমাইয়া প্রমুখ মুশরিক নেতৃবৃন্দ তাঁর শিয়রে বসে ছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুপথযাত্রী পরম শ্রদ্ধেয় চাচাকে বললেন, يَا عَمِّ قُلْ لاَ إلَهَ إلاَّ اللهُ كَلِمَةً أَشْهَدُ لَك بِهَا عِنْدَ اللهِ ‘হে চাচাজী! আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটি পাঠ করুন, যাতে আমি তার কারণে আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে সাক্ষ্য দান করতে পারি’। জবাবে আবু ত্বালিব বলেন, ‘হে ভাতিজা! যদি আমার পরে তোমার বংশের উপর গালির ভয় না থাকত এবং কুরায়েশরা যদি এটা না ভাবত যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে এটা বলেছি ও তোমাকে খুশী করার জন্য বলেছি, তাহ’লে আমি অবশ্যই ওটা বলতাম’ (ইবনু হিশাম ১/৪১৮)। অতঃপর যখন মৃত্যু ঘনিয়ে এল, তখন আবু জাহল ও তার সহোদর বৈপিত্রেয় ভাই আব্দুল্লাহ ইবনু আবী উমাইয়া বারবার তাঁকে উত্তেজিত করতে থাকেন এবং বলেন, أَتَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطّلِبِ؟ ‘আপনি কি আব্দুল মুত্ত্বালিবের ধর্ম ত্যাগ করবেন’? জবাবে আবু ত্বালিবের মুখ দিয়ে শেষ বাক্য বেরিয়ে যায়, أَنَا عَلَى مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ ‘আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের দ্বীনের উপরে’ (আর-রাউযুল উনুফ ২/২২৩)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে উঠলেন, لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْهُ ‘আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে যাব। যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়’। ফলে আয়াত নাযিল হয়- مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِيْ قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ- ‘নবী ও ঈমানদারগণের জন্য সিদ্ধ নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করুক মুশরিকদের জন্য। যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়, একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী’ (তওবা ৯/১১৩)।