ঘুমিয়ে থাকা সেই লোকগুলো

Rumman Ansari   2022-09-19   Developer   islam > ashabul kaf   290 Share

ঘুমিয়ে থাকা সেই লোকগুলো

আশ্চর্য! অ-নে-ক আশ্চর্য । সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। ২৫০ খ্রিস্টাব্দে কিংবা কোন এক যুগের সত্য অনুসন্ধানী কয়েকজন যুবক । বেড়াতে বের হয়েছিলো দ্বীন ও নিজেদের রক্ষার জন্য এবং আল্লাহর সৃষ্টি জগত দেখার মানসে । চলতে চলতে তারা গেলো দূরে । বহু দূরে । আল্লাহর সৃষ্টি জগত দেখতে দেখতে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়লো তারা । ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নেয়া হয়ে পড়লো খুবই জরুরী । আল্লাহর নাম স্মরণ করে ও রহমতের প্রত্যাশী হয়ে একটি গুহায় প্রবেশ করলো তারা বিশ্রামের জন্য ।

বিশ্রাম! সে কি বিশ্রাম! দিন যায় রাত আসে। মাস যায় বছর আসে। থামে না যুগেও । বিশ্রাম চলতে থাকে যুগের পর যুগ । ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়লো এবং ঘুমিয়ে গেলো তারা। তারা পাহাড়ের মধ্যে এক গুহায় ঘুমাতে থাকে । ঘুমের নেশায় বিভোর হয়ে। এক আর দুই নয় । একশো কিংবা দুইশো নয় । সুদীর্ঘ লম্বা সময় । একটানা সুদীর্ঘ তিন'শো নয় বছর পর্যন্ত । ভাঙলো অবশেষে তাদের ঘুম। আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠলেন তারা। কিন্তু ক'দিন ঘুমালো বলতে পারলো না কেউ । কেউ বলে একদিন । কেউ বলে তার চেয়ে একটু বেশি হবে হয়তো। মতানৈক্যের পরে অবশেষে তারা এক মত হলো । মহান আল্লাহই ভালো জানেন । কারণ আল্লাহর প্রতি ছিলো তাদের অবিচল আস্থা ও অগাধ বিশ্বাস। যাদের এ বিশ্বাস থাকে তাদের বলা হয় মু'মিন ।

ঘুমাতে ঘুমাতে তাদের বেশ খিদে পেলো। পেট মোচর দিয়ে ওঠলো তাদের। পরামর্শ সভায় বসলেন তারা। তাদের জানা আছে মুসলমানেরা কাজ করে পরামর্শ করে। গোপনীয় পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত নিলো । একজনকে পাঠানো হলো লোকালয়ের বাজারে। পবিত্র খাদ্য ও পানীয় কিনে আনার জন্য। বলে দেয়া হলো তাকে। ভদ্রতার সাথে সদ্ব্যবহার করে, কাউকে কিছু না বলে, চুপে চুপে চলে আসার জন্য । কিন্তু তা আর হলো না । ঘটে গেলো বিপত্তি। সে কি বিপত্তি!

অবশেষে লোকালয়ের লোকেরা জেনে গেলো সব। জেনে গেলো মুদ্রা দেখে। অবাক হয়ে পড়লো লোকালয়ের লোকেরা। হতবাক তারা । বিস্ময়ে বিমূঢ় । এ যে কয়েক শত বছর আগের মুদ্রা। কী এর রহস্য? কোথা থেকে এলো এসব? একজন, দু'জন। এভাবে জেনে গেলো বহুজন । সাড়া পড়ে গেলো সবখানে । উৎসুক জনতার ভিড় পড়ে গেলো পাহাড়ের পাদদেশে উৎসুক লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো । জায়গাটি করতে হবে সংরক্ষিত ও স্মরণীয়। স্থানটি হবে আমাদের ইতিহাসের অংশ। কেউ বললো রহস্য ঘেরা এ জায়গায় হবে স্মৃতিসৌধ। আবার কেউ বা বললো এখানে হবে মসজিদ। অবশেষে হয়েছিলো মসজিদ নির্মাণ। স্থানটি হলো সাউদার্ন ইন তিউনিসিয়া। এখানে পাওয়া যায় সাতটি স্লিপারস এর মসজিদের সন্ধান। কারো মতে, জায়গাটি হলো তুরস্কে । কারো বা মতে এটি হলো জর্দানে ।

মনে প্রশ্নের সৃষ্টি হতেই পারে। এদের সংখ্যা ছিলো কতজন? কুরআনুল কারিম এভাবেই বললো। তারা ছিলো তিন জন। আর চতুর্থটি হলো তাদের পথের সাথী কুকুর। তারা ছিলো পাঁচ জন। ষষ্ঠটি হলো কুকুর ।

তারা সংখ্যায় ছিলো সাত জন। অষ্টমটি হলো তাদের সাথে থাকা কুকুর তাদের নাম জানা যায় এভাবে, ইয়ামলিকা, মাকসাম মিনা, কাশফুতাত, আযরাফ তিয়ুনাস, কাশাফ তিয়ুনাস, কিবইউ আনাস ও বুশ। আর তাদের সাথে থাকা কুকুরটির নাম হলো তিমির । পাহাড়ের গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা লোকগুলোর পাহারাদার ছিলো কুকুরটি ।

কুকুর তার সামনের দু'টি পা বিছিয়ে বসে থাকতো গুহার মুখে আর গুহায় বসবাসকারী এ দলটি ঘুমাতো নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে। খুবই আরাম-আয়েশের সাথে। বিশ্ববাসীর কাছে গুহার অধিবাসীদের পরিচয় হলো 'আসহাবে কাহাফ' নামে। 'আসহাব' মানে দল আর 'কাহাফ' মানে গুহা । সব মিলিয়ে অর্থ দাঁড়ালো গুহায় বসবাসকারী দল ।

এভাবেই গুহায় বসবাসকারী রহস্যঘেরা এ দলটির যুবকরা রক্ষা পেলো জাহিলিয়াতের পাপাচার থেকে। আলোচিত হয়ে আছে যুগযুগ ধরে বিশ্ববাসীর মাঝে কৌতূহলভরে। মহান আল্লাহ মানুষের মৃত্যু ঘটান ও জীবন দান করেন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে । মহান আল্লাহ তা'য়ালাই সকল শক্তির আধার। তাই প্রকাশিত হলো এ ঘটনার মাধ্যমে । (সূরা কাহাফ অবলম্বনে) ।

প্ৰশ্ন

১. আসহাবে কাহাফ কারা ছিলো?

২. আসহাবে কাহাফের সংখ্যা ছিলো কতোজন ?

৩. আসহাবে কাহাফ কতোদিন ঘুমিয়েছিলো?

৪. একজন বাজারে গিয়েছিলো কিসের জন্যে?

৫. লোকেরা পাহাড়ে কি নির্মাণ করেছিলো?